বৈদেশিক ঋণে দেশে যেসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে সেগুলো দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।একই সঙ্গে বৈদেশিক ঋণের প্রকল্পে তিন মাস অন্তর অন্তর পর্যালোচনা ও উন্নয়ন প্রকল্পে মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান দিয়ে সমীক্ষা করার নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি।বৃহস্পতিবার (১৬ মে) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এসব নির্দেশনা দেন তিনি।রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।বৈঠকে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য অনুমোদিত ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার নতুন এডিপি বাস্তবায়নে ৩৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ বা এক লাখ কোটি টাকার অর্থায়ন বৈদেশিক উৎস থেকে আসবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির চেয়ে বিদেশি ঋণের পরিমাণ বাড়বে ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বিদেশি ঋণ ও অনুদানের পরিমাণ ছিল ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।নতুন এডিপিতে মোট ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা আসবে, যা মোট ব্যয়ের ৬২ দশমিক ২৬ শতাংশ।
নতুন এডিপিতে মোট প্রকল্প রয়েছে এক হাজার ৩২১টি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির চেয়ে মোট ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা, যা মার্চে সংশোধন করে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হ
বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প পরিচালক ও অন্যান্য কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ শেষে তাদের বিশেষায়িত এলাকায় পুনর্নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
পরিকল্পনা বিভাগের সচিবের বরাতে বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী পুনরায় প্রকল্প পরিচালকদের একটি পুল তৈরির নির্দেশনা দিয়ে যেসব প্রকল্প পরিচালক ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে, তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপর আবারও গুরুত্বারোপ করেছেন।বিদেশি অর্থায়নের প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন হারে গতিশীলতা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে এমন প্রকল্পগুলো প্রতি তিন মাসে তাদের বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে একনেকে অবহিত করতে বলেন।
সরকারপ্রধান বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগকে যেসব প্রতিষ্ঠান সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে, তাদের একটি নিবন্ধন প্রক্রিয়ার আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন- যাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানসম্পন্ন সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা যায়।সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম বলেন, সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে- কেউ যাতে পিছিয়ে না থাকে, তা নিশ্চিত করা।
পরিকল্পনা সচিব সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, আগামী অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন যাতে আরও ভালো হয়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা কমিশনকে কঠোরভাবে মনিটরিং করার নির্দেশ দিয়েছেন।
উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নে প্রকল্প গ্রহণে সরকার উপজেলা পর্যায় থেকে সরে এসে জেলাভিত্তিক প্রকল্প নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।এডিপির অধীনে নেওয়া বেশির ভাগ প্রকল্প হবে জেলাভিত্তিক হবে, যার সমন্বয় করবেন ডিসিরা।
এনইসি সভায় পরিকল্পনা কমিশনের এমন প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেছেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম।নতুন সিদ্ধান্তে জেলাভিত্তিক প্রকল্প তৈরিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির পাশাপাশি ডিসিদের ভূমিকা বাড়বে বলে মনে করছে পরিকল্পনা বিভাগ।সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এতদিন বেশির ভাগ সময়ে উপজেলাভিত্তিক প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হত, এতে সমন্বয় থাকে না। কোথাও একটা উপজেলা পাচ্ছে, কোনো উপজেলা পাচ্ছে না।‘পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব বললেন উপজেলাভিত্তিক প্রকল্প নেওয়া ঠিক হবে না, জেলাভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ করলে ভালো হয়। আমরা এনইসি বৈঠকে উপস্থাপন করলাম, প্রধানমন্ত্রী তা সভায় অনুমোদন দিলন।’তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায়ের বদলে জেলাভিত্তিক প্রকল্প তৈরিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি সমন্বয় সভা করা হবে। প্রকল্প তৈরিতে ডিসিদের সঙ্গে নিয়ে জেলাভিত্তিক একটি ‘মাস্টারপ্লান’ করা হবে।”পাঁচ বছর বা ১০ বছর মেয়াদী যাই হোক, প্রতি জেলায় একটি মাস্টারপ্লান হবে। সে অনুযায়ী প্রকল্প তৈরি করা হবে বিভিন্ন এলাকায়। এর মাধ্যমে এমপি ও ডিসিদের অংশগ্রহণ বাড়বে প্রকল্প তৈরিতে।’’জেলাভিত্তিক প্রকল্প তৈরি হলে তা বস্তবায়ন ও তদারকি আরও সহজ হবে বলে মনে করেন মন্ত্রী।তিনি বলেন, প্রথমে শুধু সংসদ সদস্যদের প্রকল্প তৈরিতে সম্পৃক্ত রাখা হলেও পরে উপজেলা চেয়ারম্যানদের মতামত নেওয়া হবে।