কালের বেলা ডেস্ক >>
ঢাকা, ২৪ জুন — ১৯৭০-এর দশকের শেষদিকে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ‘জুলাই যোদ্ধারা’ আগামী মাস থেকে মাসিক ভাতা পাবেন। সোমবার (২৪ জুন) সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
তিনি বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী আহত যোদ্ধাদের আজীবন সরকারি মেডিকেল হাসপাতালে বিনা খরচে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, তাদের পুনর্বাসনের জন্য পৃথক অধিদপ্তরও গঠন করা হয়েছে।”
পুনর্বাসনে আলাদা অধিদপ্তর
ফারুক-ই-আজম জানান, জুলাই যোদ্ধাদের স্বার্থ রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১০ তলায় স্থাপন করা হয়েছে ‘জুলাই যোদ্ধা অধিদপ্তর’। এখানে ২০ জন কর্মকর্তা কাজ করছেন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে। একইসঙ্গে আহতদের পুনর্বাসনে বিভিন্ন কর্মসূচিও হাতে নেওয়া হয়েছে, যাতে তারা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি বা ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
ভাতা ও সহায়তার ধরন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আহত যোদ্ধাদের তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো— ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’ ক্যাটাগরি।
‘এ’ ক্যাটাগরি: যারা গুরুতর আহত, যেমন—দুটি চোখ হারিয়েছেন বা এমনভাবে অঙ্গহানি হয়েছে যে চলাফেরা করতে অন্যের সহযোগিতা প্রয়োজন। মোট ৪৯৩ জন এই তালিকায় রয়েছেন। তারা এককালীন ৫ লাখ টাকা পাবেন, যার মধ্যে ২ লাখ টাকা ইতোমধ্যে পেয়েছেন, বাকি ৩ লাখ টাকা আগামী জুলাই মাসে দেওয়া হবে। মাসিক ভাতা ২০ হাজার টাকা। এছাড়া দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা থাকবে।
‘বি’ ক্যাটাগরি: যারা গুরুতর আহত হলেও আংশিকভাবে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন। এখানে ৯০৮ জন আছেন। তারা এককালীন ৩ লাখ টাকা পাবেন, যার মধ্যে ১ লাখ টাকা পেয়েছেন এবং বাকি ২ লাখ টাকা আগামী মাসে দেওয়া হবে। মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা পাবেন তারা।
‘সি’ ক্যাটাগরি: যারা বর্তমানে প্রায় সুস্থ, তাদের ১০ হাজার ৬৪২ জন তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তারা এককালীন ১ লাখ টাকা পেয়েছেন এবং আগামী মাস থেকে ১০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাবেন।
জুলাই শহীদ পরিবারদের জন্য সহায়তা
উপদেষ্টা জানান, ইতোমধ্যে ৮৩৪ জন ‘জুলাই শহীদের’ তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। প্রত্যেক শহীদ পরিবারের জন্য নির্ধারিত হয়েছে এককালীন ৩০ লাখ টাকা সহায়তা। এর মধ্যে ১০ লাখ টাকা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেওয়া হয়েছে জাতীয় সঞ্চয়পত্র আকারে। বাকি ২০ লাখ টাকা দেওয়া হবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে। এ ছাড়া, প্রতিটি শহীদ পরিবার ২০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাবে। পরিবারের যোগ্য সদস্যরা সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন।
বিদেশে চিকিৎসা ও বিশেষ উদ্যোগ
গুরুতর আহত ৭ জনকে ইতোমধ্যে তুরস্কে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। আরও অনেককে থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আহতদের প্রয়োজন অনুযায়ী মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশ-বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ থাকবে।
ডিএনএ পরীক্ষা ও ওয়ারিশ জটিলতা
ফারুক-ই-আজম জানান, শহীদদের কিছু পরিবার এখনও ওয়ারিশ জটিলতার কারণে পুরো অর্থ পাননি। এ সমস্যা দ্রুত সমাধান করা হবে। কেউ যদি নিখোঁজ স্বজনের ব্যাপারে দাবি করেন, প্রয়োজনে গণকবর থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ ঘোষণা
উপদেষ্টা জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এটি জাতীয় দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালন করা হবে।
শেষে তিনি বলেন, “জুলাই যোদ্ধারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। তাদের প্রতি জাতির সম্মান ও দায়িত্ব সারাজীবন থাকবে। সরকার তাদের পাশে আছে এবং থাকবে।