নিজস্ব প্রতিবেদক >>
প্রমত্তা যমুনার বুকে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর স্বপ্নের যমুনা রেলসেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। নতুন এই রেলসেতু বাংলাদেশের রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দুপুর ১২টা ৯ মিনিটে টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশন থেকে বিশেষ ট্রেনের যাত্রার মধ্য দিয়ে সেতুটির উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম।
সেতু পারাপারে সময়ের বৈপ্লবিক পরিবর্তন
উদ্বোধনী ট্রেনটি ১২টা ১৬ মিনিটে সেতুর পূর্বপারে ওঠে এবং ১২টা ১৯ মিনিট ২১ সেকেন্ডে পশ্চিমপারে পৌঁছে যায়। ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলসেতু পার হতে সময় লেগেছে মাত্র ৩ মিনিট ২১ সেকেন্ড, যেখানে আগে সড়ক পথের রেলসেতুতে প্রায় ১৮-২০ মিনিট সময় লাগত।
প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও সুবিধা
যমুনা রেলসেতু একটি সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাক সেতু। জাপানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন ব্যবহারের ফলে সেতু দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, ট্রায়াল ট্রেনে সর্বোচ্চ ২ মিনিটের মধ্যেই সেতু পারাপার সম্ভব হয়েছে।
নতুন সংযোগ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা
ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ এখন অনেক গতিশীল হবে। বিশেষ করে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনার সঙ্গে রেল সংযোগ সহজ হবে, কমবে যাত্রার সময় ও পরিবহন খরচ। প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন সেতুটি ব্যবহার করবে, ফলে মহাসড়কের ওপর চাপও কমবে।
ব্যয় ও অর্থায়ন
প্রকল্পটির মোট ব্যয় ১৬,৭৮০.৯৬ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৭২.৪০% অর্থায়ন করেছে জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকা এবং বাকি ২৭.৬০% এসেছে দেশীয় উৎস থেকে। জাপানি পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের প্রায় ৭,০০০ কর্মীর চার বছরের পরিশ্রমে সেতুটির নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
সকালে ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত H.E. Mr. SAIDA Shinichi, জাইকার সাউথ এশিয়া ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর জেনারেল Mr. ITO Teruyuki, এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি।
যমুনা রেলসেতুর উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। এটি শুধুমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করবে না, বরং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম জানিয়েছেন, সেতুটির উভয় প্রান্তে ডাবল লেন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন রেলসেতুর ফলে ঢাকা থেকে রাজশাহীর ভাড়া ৪০৫ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।