মপি আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের বাংলোতে যাতায়াত। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হয়েও ভয়ে থাকেন মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অন্য কর্মকর্তারা। এমপির নাম ভাঙিয়ে ১১ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে তিনি। অনিয়মই যার কাছে নিয়ম। এক সময় পরিচয় দিতেে র্যাবের সোর্স আবার কখনো সেজেছেন সাংবাদিক। হয়েছেন বিপুল সম্পদের মালিক। বলছি একসময়ে অ্যাসিড নিক্ষেপ ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলার আসামি এমপি আনারের বন্ধু পরিচয়দানকারী গোলাম রসুলের কথা। গোলাম রসুল উপজেলার ফয়লা গ্রামের আফসার আলীর ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোলাম রসুল এক সময় জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১২ সালের ১৭ জুন অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনে মামলা হয় গোলাম রসুলের বিরুদ্ধে। এরপর একই সালের ৬ নভেম্বর আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধে দ্রুত বিচারে তার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা হয়। কিন্তু এসব মামলায় কিছুই হয় না তার। ২০১২ সালের ১০ নভেম্বর র্যাব গোলাম রসুলকে আটক। সেই সময় তার আটকের ছবিও প্রকাশ করে র্যাব। ২০১৪ সালে আনোয়ারুল আজিম আনার এমপি হওয়ার পর দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে থাকে। এসব মামলায়ও কিছু হয় না গোলাম রসুলের।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালে তার বন্ধু আনোয়ারুল আজিম আনার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন গোলাম রসুল। প্রায় ১১ প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে জড়িত থাকার কথা জানা গেছে। এর মধ্যে মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের দুবারের সভাপতি তিনি। বন্ধু এমপির দাপটে কোনোবারেই নির্বাচন করা লাগেনি তার। কেউ সভাপতি পদে ভোট করতে চাইলেও তাকে বিভিন্ন অজুহাতে ভোট থেকে দূরে রাখেন বিভিন্ন কৌশলে। এ ছাড়া মোবারকগঞ্জ চিনিকল সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক তিনি। দীর্ঘ ১৫ বছর তিনি এই পদে বহাল। দুই বছর পর পর কমিটি করার কথা থাকলেও তিনি এমপির ভয় দেখিয়ে নিজের ইচ্ছামতো পদ বাগিয়ে নিয়ে বসে আছেন। এই সমবায় সমিতিতে রয়েছে দুটি পেট্রোল পাম্প, দুটি পুকুর। ভয়ে কেউ এসবের হিসাব নিতে পারে না। নিজের ইচ্ছায় পরিচালনা হয় প্রতিষ্ঠানগুলো।
৪ কেজি মাংসের টুকরো উদ্ধার, যা বললেন এমপি আনারকন্যা এ ছাড়া তিনি মোবারক আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, শহীদ নুর আলী কলেজের সদস্য, কালীগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, কালীগঞ্জ ফুড সেফটির সভাপতি, আলহাজ বদর উদ্দিন ও এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার অটিস্টিক বিদ্যালয়ের সভাপতিও তিনি। এ ছাড়া মসজিদ-মাদ্রাসার সভাপতিও এই গোলাম রসুল। এদিকে নিজ গ্রাম ফয়লায় তার ভাইপো রকিকে দিয়ে গড়ে তুলেছেন কিশোর গ্যাং। কিছু দিন আগেও মদসহ ধরা পড়ে কয়েকজন সদস্য। গোলাম রসুলের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তার ভাইপোর নিয়ন্ত্রিত কিশোর গ্যাং দিয়ে হামলা করানোর ঘটনাও ঘটে।
চিকিৎসার জন্য কলকাতায় গিয়ে হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। এ সময় হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে নাম আসে পাশ্ববর্তী কোটচাঁদপুর উপজেলার আক্তারুজ্জামান শাহীনের। এলাঙ্গী গ্রামে শাহীনের রয়েছেন আলিশান বাংলো। নির্জন বাড়িতে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। সেখানেও এমপি আনারের সঙ্গে গেছেন গোলাম রসুল।
এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের এমপি আনারের বন্ধু গোলাম রসুল বলেন, আনার ও আক্তারুজ্জামানের সম্পর্ক প্রায় ৩০ বছরের। তাকে নিয়ে এমপি আনার সেই বাংলোতে দুবার গেছেন। গত ৪ মাস আগেও তিনি সেখানে গেছেন।
এ ব্যাপারে এমপি আনারের বন্ধু গোলাম রসুল বলেন, তিনি দুবার শাহীনের বাংলোতে গেছেন এমপির সঙ্গে। একবার বিয়েতে আর একবার দর্শনা থেকে ফেরার পথে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা অ্যাসিড নিক্ষেপ মামলা দিয়েছিল। এক বছর পর সেটি মীমাংসা হয়। জনপ্রিয়তার কারণে কেউ তার বিরুদ্ধে সভাপতি পদে মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে দাঁড়ায় না। আমার নামে সুগার মিলের কোনো কিছু লিজ নেই।