সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নের বেতকান্দি পূর্ব ফকিরপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। মসজিদের ভূমিদাতা পরিবারের সদস্য ও গ্রামবাসীদের মধ্যে বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত যে, যে কোনো সময় বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
প্রায় দেড়শ বছর আগে গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সদস্য আজিজুল হক আকন্দ মসজিদটি নির্মাণের জন্য তিন শতাংশ জমি দান করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে তার ছেলে সেরাজুল হক আকন্দ জমিটি মসজিদের নামে ওয়াকফ করেন। এতদিন ধরে এই মসজিদটিই এলাকাবাসীর নামাজ আদায়ের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।
সম্প্রতি এলাকাবাসী মসজিদের অদূরে একটি নতুন মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এরপর স্থানীয় বেলাল ফকিরের নেতৃত্বে একদল লোক পুরাতন মসজিদটি ভাঙার উদ্যোগ নেয়। মসজিদটি ভাঙতে গেলে ভূমিদাতা পরিবারের সদস্য মুকুল আকন্দ ও তার আত্মীয়রা প্রতিবাদ জানান। কিন্তু প্রতিবাদ উপেক্ষা করে দুর্বৃত্তরা মসজিদের ছাদের কিছু অংশ ভেঙে ফেলে এবং জানালার গ্রিল ও সিলিং ফ্যান খুলে নিয়ে যায়। একইসঙ্গে মুকুল ও তার ভাইদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে পুরো মসজিদটি ভেঙে ফেলার ঘোষণা দেয়।
মসজিদ রক্ষার দাবিতে মুকুল আকন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও অন্যান্য দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করলে তার পরিবারের ওপর হামলা চালানো হয়। দুর্বৃত্তরা তাদের বাড়িঘরে হামলা করে এবং ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। প্রাণনাশের হুমকির মুখে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, আর নারী ও শিশুরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অনেক এলাকাবাসী যুক্তি দিয়েছেন যে, একই এলাকায় দুটি মসজিদের প্রয়োজন নেই। তাই পুরাতন মসজিদটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তারা স্বীকার করেছেন যে, এ নিয়ে সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকলেও বাড়িঘরে হামলার ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত।
অন্যদিকে, নতুন মসজিদের ইমাম জানিয়েছেন, পাশাপাশি দুটি মসজিদ থাকা ইসলামে নিষিদ্ধ নয়, তাই চাইলে দুটি মসজিদই চালু রাখা যেতে পারে।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া থানার ওসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, মসজিদ ভাঙা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকায় এবং ঐতিহ্য রক্ষার স্বার্থে মসজিদটি না ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মসজিদটি ভাঙাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা এখনো বিরাজ করছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘাত বেঁধে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।