শাহরিয়ার মোর্শেদ >>
সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় ওসির দাপটে দিনরাত কৃষি জমিতে চলছে একের পর এক পুকুর খনন। এতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শত শত বিঘা ফসলি জমি। খনন করা মাটিও বিক্রি করা হচ্ছে আশপাশের ইটভাটায়। আর মাটি পরিবহনের সময় ট্রাক্টরের চাকায় নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট।
কৃষকদের একাধিক লিখিত অভিযোগও কোন কাজে আসছে না। কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না পুকুর খননের কাজ। এলাকায় একের পর এক পুকুর খননের কারণে ফসলের মাঠে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এতে কমছে ফসল উৎপাদনও।
সলঙ্গা থান জুড়ে চলছে পুকুর খননের মহাউৎসব। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না, কিন্তু এই নির্দেশনা উপেক্ষা করেই কৃষিজমি পরিণত করা হচ্ছে পুকুরে। ফলে কৃষকের হারাতে হচ্ছে কৃষিজমি। এতে করে কৃষির ওপর চাপও বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শুধু তাই নয়, বিশেষজ্ঞদের দাবি দ্রুত পুকুর খননের কাজ বন্ধ করা না গেলে সলঙ্গার আশেপাশের কয়েকটি উপজেলার কৃষিজমি শূন্যের কোটায় দাঁড়াবে। এতে পুরো থানাজুরে কৃষিতে হুমকির মুখে পড়বে। যার প্রভাব পড়বে পুরো দেশের উপর। যার কারণে দ্রুত পুকুর খননের কাজ বন্ধ করতে হবে।
সলঙ্গা থানার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পাঠানপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মোন্নাফ এ প্রতিবেদক কে বলেন, মোটা অংকের টাকা নিয়ে তিন বা চার ফসলি কৃষি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খননের মৌখিক অনুমতি দিচ্ছেন রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ সোলায়মান হোসেন ও
সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক । আর তাকে সহযোগিতা করছেন ওসি গাড়ীর ড্রাইভার আলামিন। ও তিনি আরো বলেন, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম হিরো পাঠানপাড়া গ্রামে ২৬ বিঘা তিন ফসলি কৃষি জমিতে পুকুরখননের জন্য ভেকু মেশিন ঢোকানোর জন্য গ্রামবাসীকে নিয়ে বৈঠকে বলেন, এই পুকুর আমার আমি পুকুর কাটবো পারলে ঠেকাও, রফিকুল ইসলাম হিরো চেয়ারম্যানের পুকুর খননের এমন হুমকি দায়ক কথা শুনে পাঠানপাড়া গ্রামের প্রায় দুই শত মানুষকে নিয়ে সাবেক মেম্বার মাসুদ রানা ও আব্দুল মোন্নাফ অবৈধ পুকুর খননের ভেকু মেশিন রাত্রিতে যেন না নিতে পারে তাই রাত্রি ১১ টায় রাস্তায় পাহারা দেন, এমন সময় সলঙ্গা থানার ওসির নির্দেশে এস আই আমির পাঠানপাড়া গ্রামবাসীর সামনে গিয়ে গ্রামবাসীকে বলেন আপনারা সবাই চলে যান ভেকু মেশিন ঢুকবে,এস আই আমিরের এমন কথা শুনে মাসুদ মেম্বার ও আব্দুল মোন্নাফ এস আই আমিরকে বলেন আমরা রাষ্ট্র বিরোধী কাজ করতে দিবো না স্যার আপনারা চলে জান, গ্রামবাসী ও আব্দুল মোন্নাফের এমন কথা শুনে এস আই আমির তাদেরকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখান ও বলেন এত রাতে রাস্তায় থাকার অপরাধে গরু চুরির মামলা দিব গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাব। গ্রামবাসী এস আই আমির কর্তৃক গ্রেফতারির হুমকির ভয়ে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে মোঃ আব্দুল মোন্নাফ সলঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ এনামুল হককে উক্ত বিষয়ে অবগত করলে মোবাইল ফোনে আবদুল মোন্নাফকে ওসি বলেন ভেকু মেশিন বাধা দিলে মেশিন মালিক যদি চাঁদাবাজি মামলা দেয় তাহলে আমি মামলা নিব। ভুক্তভোগী কৃষকেরা আরো বলেন এই সিন্ডিকেট চক্র ও চেয়ারম্যান বাহিনী শক্তিশালী ভাবে কাজ করছে। ওই চক্রকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে কৃষিজমিতে পুকুরখননের কাজ করাচ্ছেন সলঙ্গা থানার ওসি এনামুল হক।
আর ওসির আনুমতির বাহিরে দু’একটি পুকুর খননের কাজ করা হচ্ছে। তাদের গাড়ীর চাবি নিয়ে নেয়া হচ্ছে। পরে ওসির সাথে যোগাযোগ করা হলে চাবি ও ব্যাটারি বিঘায় দশ হাজার করে টাকা নিয়ে চাবি ফেরৎ দেয়াও হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা। যার ফলে স্থানীয় কৃষকদের কোন অভিযোগই কাজে আসছে না।
সরজমিনে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের আগরপুর বাজারের উত্তর পাশে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় বিশ বিঘা তিন ফসলি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন করছেন ভূমি দস্যু স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আগরপুর গ্রামের মোঃ আরিফুল ইসলাম (আরিফ) ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রহিমাবাদ গ্রামে, ১২ বিঘা ৩ ফসলি জমিতে অবৈধ ভাবে পুকুর খনন করছে ভূমি দস্যু আব্দুর রশিদ,ও বারেক। জালশুকা গ্রামে প্রায় ১০ বিঘা চার ফসলি জমিতে অবৈধ ভাবে পুকুর খনন করছেন মোঃ হায়দার আলী।
উক্ত পুকুরের বিষয়ে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের এক নাম্বার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলম রেজার সাথে কথা হলে তিনি বলেন সলঙ্গা থানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার মিলছে না অবৈধ ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে প্রকাশ্যে কৃষি জমিতে দিনরাত পুকুর খননের কাজ করে যাচ্ছে। স্থানীয়রা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে কোন কাজে আসছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সলঙ্গা থানার প্রায় ইউনিয়নেই ফসলি জমিতে পাল্লা দিয়ে পুকুর খনন চলছে। সলঙ্গা ইউনিয়নের প্যাচর পাড়া ১৫ বিঘা, বাশিদক্কল,বনবাড়িয়া,
অপরদিকে ধুবিল ইউনিয়নেরের মধ্যপাড়া ভরমোহনী গ্রামের ভুক্তভোগী কৃষক মোঃ সোহেল রানার সাথে কথা বলে জানা যায় বিজ্ঞ আদালতে মামলা থাকা সত্ত্বেও থানার ওসিকে ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েবদেরকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করেই, ধুবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান রাসেলের ভাই খলিলুর রহমান শোভন উত্তর পাড়া ভরমোহনী গ্রামে ২৮ বিঘা ৩ ফসলি জমিতে দিন রাত সমানতালে অবৈধ ভাবে পুকুর খনন করছে। সলঙ্গা, ও রামকৃষ্ণপুরে গত ১ বছরে শতাধিকের বেশি পুকুরকাটা হয়েছে। মাঝে কিছুদিন পুকুরকাটা বন্ধ ছিল। চলতি বছরে বর্ষার পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন স্থানে পুকুর কাটা শুরু হয়েছে। তবে পুকুর কাটার অপরাধে লোক দেখানো অল্প কয়েকজনের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন ও থানার ওসি অল্প কয়েকজনের বিরুদ্ধেই মামলা মামলা দায়ের করেছেন।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম হিরো বলেন কে পুকুর কাটল আর কে না কাটলো সেসব খবর আমি রাখিনা এ সকল পুকুর খনন বিষয় আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক মোবাইল ফোনে জানান পুকুর খননের বিষয়ে খবর পেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেই এবং ইউ এন ও মহোদয় রাও নেন আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউ এন ও সানজিদা সুলতানা মোবাইল ফোনে ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলেন, দিবারাত্রি পুকুর খননের বিষয়টি সত্য নয়,আপনার মাধ্যমেই জানতে পারলাম একথা বলেই মোবাইল ফোন কেটে দেন।