গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতার কারণে ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগের বিষয়ে অবশেষে পশ্চিমাদের উদাসীনতার অবসান ঘটতে শুরু করেছে।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের কারণে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, সে বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নীরব ছিল পশ্চিমা বিশ্বের অনেকেই। এই দখলদারিত্বের বিষয় কখনো বছরজুড়ে আবার কখনো দু-একদিনের জন্য খবরে থাকত। তারপরে এটি আবার হারিয়ে যেত। যারা দুপক্ষের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানতেন, তারা খুবই আবেগপ্রবণ ছিলেন। বিষয়টি খুব ‘জটিল’। সুতরাং অনেকে নিরপেক্ষ থাকাই পছন্দ করেছেন। আবার অনেকেই ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে চালানো অপপ্রচার বিশ্বাস করেছিলেন।
তবে গত ছয় মাসে ইসরোয়েলি হামলার যে বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা দৃশ্যমান হয়েছে, তাতে ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগের বিষয়ে বড় একটা অংশের যে উদাসীনতা ছিল, তার অবসান ঘটেছে।
আলজাজিরার মতো সংবাদমাধ্যম এবং ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের নির্ভীক প্রতিবেদনের ব্যাপক মিডিয়া কভারেজে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গাজা ও ফিলিস্তিনের বাকি অংশের জনগণকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে যে বাস্তবতা সহ্য করতে হয়েছে, সে সম্পর্কে মানুষের চোখ খুলে দিয়েছেন তারা।
গাজায় কর্মরত ও যুক্তরাজ্যের নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করা অন্যতম শীর্ষস্থানীয় এনজিও অ্যাকশন ফর হিউম্যানিটির প্ল্যাটফর্মে ইউগভের মাধ্যমে আমরা জরিপ পরিচালনা করেছি। সেখানে দেখেছি, যুক্তরাজ্যের ৫৬ শতাংশ মানুষ এখন ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের পক্ষে। আর মাত্র ১৭ শতাংশ মানুষ বিপক্ষে এবং বাকিরা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি।
এই সমর্থন অনেক বেশি। আমরা বছরের পর বছর ধরে সিরিয়া ও ইয়েমেনের মতো সংঘাত বিষয়ে জনমত নিয়ে কাজ করছি। সেসব ক্ষেত্রে দেখেছি, যুদ্ধ সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের জনগণ সচেতন তো ছিলই না, বরং এ সম্পর্কে তাদের এতটা আবেগও দেখা যায়নি।
এদিকে গাজা প্রসঙ্গে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, উত্তরদাতাদের পাঁচজনের মধ্যে প্রায় তিনজন বা ৫৯ শতাংশ বলেন, ইসরায়েল গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে বলে তারা মনে করেন। আর মাত্র ১২ শতাংশ মনে করে, এখানে তেমন কিছু ঘটেনি।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, ১ এপ্রিল ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন ত্রাণকর্মীদের হত্যার আগে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়েছিল। নৃশংস ওই ঘটনা যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিল। আমরা মনে করছি, ওই ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী যে নিন্দার ঝড় বয়ে গেছে, সে কারণে বিপুলসংখ্যক লোক অনুভব করতে পেরেছে কী ভয়াবহ ঘটনা ঘটে চলেছে গাজায়। এর চেয়ে ভয়াবহ হামলা আর হয়নি।
ইউগভের অন্যান্য জরিপে দেখা গেছে, গাজার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ আরও দীর্ঘ হলে, আরও বেশি লোক যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করবে। ওই জরিপে আরও দেখা গেছে, এই সংখ্যা নভেম্বরে ৫৯ শতাংশ থাকলেও ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬ শতাংশে। এ ছাড়া নভেম্বরে গাজার ওপর আক্রমণ ন্যায়সংগত নয় বলে মনে করত ৪৪ শতাংশ; ফেব্রুয়ারিতে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ শতাংশে। একইভাবে নভেম্বরে শান্তি আলোচনা চাওয়ার পক্ষে ছিল ৬১ শতাংশ মানুষ; ফেব্রুয়ারিতে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬ শতাংশে।
আমরা পশ্চিমা বিশ্বজুড়ে একই রকম অবস্থা দেখছি। ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় সমর্থক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, গাজায় বেসামরিক মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির ন্যায্যতা প্রমাণ করার চেষ্টা করছে হোয়াইট হাউস প্রশাসন। তবে জনগণ তাতে সমর্থন দিচ্ছে না।
সিবিএস/ইউগভের এক জরিপে দেখা গেছে, অক্টোবরে ৪৭ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক মার্কিন নাগরিক ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠানোর পক্ষে ছিলেন। চলতি মাসে এ সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩২ শতাংশ; যা এক তৃতীয়াংশেরও কম। একই সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পক্ষেও সমর্থন বাড়ছে।
আমরা বিশ্বাস করি, পশ্চিমা বিশ্বজুড়ে এই সমর্থন বাড়ছে। এখন পশ্চিমা জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ গাজা, পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, সে সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন হয়ে উঠছে। এমনকি যারা একসময় গাজায় বিপুলসংখ্যক বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুকে ন্যায়সংগত মনে করেছিল, তারাও এখন মনে করছে, যা ঘটছে তাকে কোনো কিছু দিয়ে ন্যায্যতা দেওয়া যেতে পারে না।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, পশ্চিমা সরকারের রাজনীতিবিদরা তাদের জনগণের মনোভাবের সঙ্গে একেবারেই একমত নয়। এটা শুধু নৈতিকতার অবক্ষয় নয়, রাজনৈতিক অদূরদর্শিতাও বটে।
২০২৪ সালকে ‘নির্বাচনের বছর’ বলা হয়েছে কারণ এই বছরের কোনো না কোনো সময়ে বিশ্বের কমপক্ষে ৪৯ শতাংশ লোক ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। যেসব রাজনীতিবিদ বুঝতে পারেন না যে, তাদের জনগণ চায় গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘনকে সহায়তা ও সমর্থন বন্ধ করতে রাজনীতিবিদরা ভূমিকা পালন করুক, তারা নির্বাচনে পরাজিত হবেন। এমনকি যারা তাদের বিবেকের মুখোমুখি হতে অস্বীকার করেন, তাদেরও একই পরিণতি হবে।
অনেকে বিশ্বাস করে যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টি পরবর্তী সরকার গঠন করবে। ইসরায়েলকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করতে জনগণের ক্রমবর্ধমান দাবির পেছনেও এই দলের ভূমিকা রয়েছে। এমনকি আমাদের জরিপে দেখা গেছে, পরবর্তী নির্বাচনে যারা লেবারকে ভোট দিতে চেয়েছিলেন তাদের ৭১ শতাংশ বিশ্বাস করেন, ইসরায়েলকে অর্থ সহায়তা বন্ধ করা উচিত যুক্তরাজ্য সরকারের।
জনগণের অজ্ঞতার কারণে দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নির্যাতনকে সমর্থন করতে সক্ষম হয়েছিল পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো। সেখানে কী ঘটছে সে বিষয়ে লোকজন মনোযোগ না দেওয়ায় এবং মিথ্যার ফাঁদে পা দেওয়ায় দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে শাসকরা এসব বর্বরতায় সমর্থন দিতে পেরেছে। এখন সে সময় শেষ হয়ে গেছে। মানবতা সব স্থানেই, সবভাবেই অপরিহার্য। অধিকাংশ মানুষই মনে-প্রাণে শান্তি ও ন্যায়বিচারে বিশ্বাসী। তারা জানে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা অন্যায়। এখন বিশ্ব গাজার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে, সবাই দেখতে পাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা কী নিষ্ঠুর, ভয়ংকর বাস্তবতা সহ্য করছে। এটা আরও দীর্ঘায়িত হোক তা তারা চায় না।
লেখক : ওথমান মোকবেল প্রধান নির্বাহী, অ্যাকশন ফর হিউম্যানিটি।
Your posts consistently offer useful insights; you are a reliable source of knowledge.
This blog post struck a chord with me on a personal level. It’s like you read my mind!
It is appropriate time to make some plans for the future and it’s time to be happy.
I have read this post and if I could I want to suggest you some
interesting things or suggestions. Maybe you could write next articles referring to this article.
I wish to read more things about it!
This is such a relevant topic; I’m glad I stumbled upon your blog.
Your zeal is infectious. It’s hard not to feel excited by the topics you explore.