লুৎফর রহমান নিজস্ব প্রতিবেদক >>
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধে নিজের মাথা নিজেই কেটে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ‘হত্যাচেষ্টা’ মামলা করার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে বৃদ্ধের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তের নাম নাজিম উদ্দীন, বয়স ৭৩।
গত ৯ মে রায়গঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন নাজিম উদ্দীন। মামলায় তিনি দাবি করেন, একই গ্রামের চারজন তার ওপর দুই দফায় হামলা চালিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। তবে স্থানীয়দের দাবি, ঘটনাটি সম্পূর্ণ সাজানো এবং বাস্তবে এমন কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।
জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৃত গোলাম রব্বানীর ছেলে ফারুক হোসেন ও তার ভাইদের সঙ্গে নাজিম উদ্দীনের দীর্ঘদিনের জমি বিরোধ রয়েছে। ১৯৯১ সালে একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে ৩৩ শতাংশ জমি দলিল করেন নাজিম উদ্দীন, যার মধ্যে ১৫ শতাংশ ছিল গোলাম রব্বানীর মালিকানাধীন। বর্তমানে সেই জমি উদ্ধারে উচ্চ আদালতে মামলা চলছে।
ভুক্তভোগী ফারুক হোসেন অভিযোগ করেন, “আমাদের জমি দখল করেই তিনি স্কুল করেছেন। মামলায় হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় তিনি নিজেই মাথায় আঘাত করে নাটক সাজিয়েছেন এবং আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন।”
স্থানীয়দের প্রতিবাদ
এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ৯ মে নাজিম উদ্দীনের ওপর কোনো হামলা হয়নি। কেউ তাকে আহত অবস্থায় দেখেননি বা হাসপাতালে নিতে দেখেননি। বরং তিনি নিজেই শহরে গিয়ে মাথায় আঘাত করে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং পরে থানায় অভিযোগ করেন।
আলম শেখ, তুযাম শেখ ও রব্বানীসহ স্থানীয়রা বলেন, “নাজিম উদ্দীন এলাকায় একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। তিনি প্রভাব খাটিয়ে লাঠিয়াল দিয়ে জমি দখল করেন। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। এলাকার কারও সঙ্গে তার সামাজিক সম্পর্ক নেই।
মামলার অভিযোগ
মামলার এজাহারে নাজিম উদ্দীন দাবি করেন, ৯ মে সকাল সাড়ে ৬টা ও সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রতিপক্ষরা দলবদ্ধভাবে তাকে মারধর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
তবে ওইদিন কোনো হামলার ঘটনা ঘটেছে—এমন প্রমাণ মেলেনি বলে স্থানীয়দের বক্তব্য। মামলার স্বাক্ষীদের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
সত্য উদঘাটনে তদন্ত জরুরি
ভুক্তভোগীরা মামলাটি দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। ফারুক হোসেন বলেন, “আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে প্রমাণ হবে, নাজিম উদ্দীনই মামলার নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারী।
এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন তদন্তে কী ফলাফল তুলে ধরে এবং এই নাটকীয় মামলার আসল সত্য কতটা দ্রুত উদঘাটন হয়।