রাজধানীর ফার্মগেটের শহীদ আনোয়ারা উদ্যান ফিরিয়ে দিতে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে এক মাসের আল্টিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনরত নাগরিকরা।
শনিবার (১৮ মে) বিকেলে শহীদ আনোয়ারা উদ্যান চত্বরে আয়োজিত সংহতি সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়েছে।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, দেশজুড়ে উন্নয়নের নামে মাঠ, পার্ক, উদ্যান দখল করা হচ্ছে। বনভূমি, নদী, পাহাড়, জলাশয়, সবুজবলয় নিরাপদে নেই। এমনকি উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতিবিজড়িত ফার্মগেটের ঐতিহাসিক শহীদ আনোয়ারা উদ্যানেও উন্নয়নের নির্দয় আঘাত লেগেছে। এভাবে ক্রমাগত পরিবেশ ও ইতিহাসবিমুখ হয়ে উঠছি। এইরকম পরিস্থিতি সুস্থ সংবেদনশীল নতুন প্রজন্মের জন্য হুমকি।
আলোচকেরা বলেন, সাময়িক ব্যবহারের কথা বলে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ শহীদ আনোয়ারা উদ্যানের গাছ কেটে পুরো উদ্যান দখল নিয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার পরও এই উদ্যান নগরবাসী ফেরত পায়নি।
কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সংগঠক সৈয়দা রত্না বলেন, ‘ঢাকা শহরের বাচ্চারা আর খেলবে না। কারণ তাদের খেলার জায়গা নেই। পাখিরাও খেলবে না, প্রজাপ্রতিরাও আর আসবে না। আমরা শুধু মার্কেট করব, রেস্তোরাঁ করব, শপিং করব আর খাব। আমাদের জীবনে কোনো সবুজ নেই, অক্সিজেনের দরকার নেই। ফুল পাতা পাখি নেই। উদ্যানের দরকার নেই। আমাদের সব উদ্যান ভেঙে কংক্রিট হয়ে যাক, আমরা কংক্রিটের ভূত হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরব।’
নারী আন্দোলনের নেত্রী শিরিন হক বলেন, ‘একটার পর একটা যদি উদ্যান হারিয়ে যায়। আর গাছ কাটা যদি বন্ধ না হয়, তাহলে ঢাকা শহরে মানুষ বসবাস করতে পারবে না। আমাদেরতো আর শপিং প্লাজার দরকার নেই। ঢাকার শহরের কি আর বাজারের দরকার আছে? নাকি একটু নিশ্বাস ফেলার জায়গার দরকার আছে। যেখানে মানুষ নিশ্বাস নিতে পারবে, বাচ্চারা খেলাধুলা করতে পারবে। আনোয়ারা উদ্যানে মেট্রো প্লাজা করলে, আমরা তা মেনে নেব না।’
নগর-পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘আনোয়ারা উদ্যান পার্ক ছিল, বলা হচ্ছে মেট্রোরেলের অবকাঠামোর জন্য উদ্যান ছেড়ে দিতে হবে। অবকাঠামো এবং পার্কের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করা এটা রাষ্ট্রের দিক থেকে একটা অনাচার। সাময়িক ব্যবহারের কথা বলে এখন স্থায়ী অবকাঠামো তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এটা হচ্ছে জনগণের সঙ্গে রাষ্ট্র বিশ্বাসভঙ্গ করেছে।’
ফার্মগেট শহীদ আনোয়ারা উদ্যান রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব বলেন, ‘এই আন্দোলন শুধু শহীদ আনোয়ারা উদ্যান রক্ষার আন্দোলন নয়, আমরা আন্দোলন করছি পান্থকুঞ্জ পার্ক, সাহাবউদ্দিন পার্ক, তেঁতুলতলা মাঠ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাঁচানোর জন্য। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আনোয়ারা উদ্যান খালি না করলে ঘেরাও কর্মসূচিসহ আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
পাভেল পার্থের সঞ্চালনায় সংহতি সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাপা সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, বিআইপির সাবেক সভাপতি আকতার মাহমুদ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, পরিজার সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল প্রমুখ।