মঙ্গলবার , ৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৪শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - বর্ষাকাল || ১২ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

তাড়াশে হাতি দিয়ে ব্যস্ত সড়কে চাঁদাবাজি : আতঙ্কিত পথচারি

প্রকাশিত হয়েছে- শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫

লুৎফর রহমান, তাড়াশ সিরাজগঞ্জ >>

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সপ্তাহজুড়ে বিভিন্ন ব্যস্ততম সড়কে হাতি দিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করলেও স্থানীয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছেন। এতে করে পথচারিরা আতঙ্কিত হয়ে পরেছেন। ঈদ পরবর্তী উপজেলার বিভিন্ন রাস্তায় যানবাহন ঠেকিয়ে হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি অব্যাহত রয়েছে। আজ শুক্রবার (১৯ জুন সন্ধ্যায়) তাড়াশ-সলঙ্গা আঞ্চলিক সড়কের কৃষ্ণদীঘি বাজারে সর্বশেষ এ চিত্র দেখা গেছে।
এলাকাবাসী জানায়, রনি নামের এক মাহুত একটি হাতি নিয়ে সপ্তাহব্যাপি তাড়াশ বাজার, হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের ১০ নং ব্রিজ, মান্নাননগর ও মহিষলুটি বাজার, তাড়াশ-রানীরহাট আঞ্চলিক সড়কের বিনসাড়া, গোন্তা, মানিকচাপর, তাড়াশ-খালকুলা সড়কের খুঁটিগাছা,মঙ্গলবাড়িয়া, বাঁশবাড়িয়া ও তাড়াশ-সলঙ্গা আঞ্চলিক সড়কে চলন্ত বাস,ট্রাক,প্রাইভেটকার,সিএনজি ইত্যাদি যানবাহন ঠেকিয়ে পথচারিদের নিকট থেকে চাঁদাবাজি করছে। টাকার পরিমাণ কম হলে মাহুতের ইশারায় হাতি হিংসাত্মক আচরণ করছে। বিশেষ করে বাইক চালকেরা পরেছেন আরো বিপাকে। চলন্ত গাড়ির সামনে হঠাৎ করে দানবীয় কায়দায় হাতি দাঁড় করিয়ে দিলে, প্রবল বৃষ্টির মধ্যে অনেকেই ভারসাম্য রাখতে না পেরে ছিটকে পড়তে দেখা গেছে। এ ঘটনায় সে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ঘটনাটি পুলিশ কে জানালে, এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি।
তাড়াশ-সলঙ্গা আঞ্চলিক সড়কে সিএনজি চালক শামীম হোসেন বলেন, এ রাস্তায় যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে চার বার হাতির সামনে পরে চাঁদা দিতে হয়েছে। আগে অনেক হাতিওয়ালা ১০/২০ টাকা দিলেই চলে যেতো। এবার ঈদ সালামীর কথা বলে ৫০ টাকার নিচে নিচ্ছেই না। কেউ এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে মাহুতের লোহার  আঘাতে হাতি হিংসাত্মক  আচরণ করছে। যারফলে পথচারিরা আতঙ্কিত হয়ে পরেছে।
মোটর সাইকেল চালক সলঙ্গা থানার অলিদহ গ্রামের রবিউজ্জামান বলেন, চলন্ত বাইকের সামনে হঠাৎ হাতি এসে পরায় তিনি আতঙ্কিত হয়ে পরেন। ২০ টাকা কোনো মতে বের করে দিতে চাইলে মাহুতের দাবি ১ শ টাকা। তিনি তা দিতে অস্বীকার করলে, মাহুতের ইশারায় লম্বা শুড় দিয়ে তার মোটর সাইকেলের দিকে ধেয়ে আসলে তিনি রাস্তার পাশে ছিটকে পরে আঘাত পান।
এ ছাড়াও প্রচন্ড বৃষ্টিতে জলকাদায় খানাখন্দে ভরা রাস্তায় হাতি দেখে অনেককেই বিপজ্জনকভাবে পাশ কাটিয়ে চলতে দেখা গেছে।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা বন কর্মকর্তা মো: কামরুল ইসলাম বলেন, হাতি পালন করতে হলে অবশ্যই লাইসেন্স থাকতে হবে। সেই সাথে থাকতে হবে উপযুক্ত স্থান, চারণভূমি, খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা। হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি অবশ্যই বেআইনী কাজ।
চলনবিল পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের অধিকারকর্মী মো: আব্দুর রাজ্জাক রাজু বলেন, সম্প্রতি হাতি পালনে লাইসেন্স প্রদান ও বিদ্যমান লাইসেন্স নবায়ণ বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ে অভিনেত্রী জয়া আহসান ও প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন পিপল ফর অ্যানিমেল অয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশান   একটি রিট করলে আদালত এ সিদ্ধান্ত নেয়।
তিনি আরোও বলেন, হাতির মতো একটি মহৎপ্রাণীকে বন্দী করে সার্কাস বা চাঁদাবাজির জন্য নির্মমভাবে প্রশিক্ষিত করা হয়। এ ছাড়া মাহুতের হাতে থাকা লোহার  অঙ্কুশ দিয়ে হাতির দুর্বলস্থানে আঘাত করে চাঁদাবাজিতে বাধ্য করা হয়। যা সম্পূর্ণ অমানবিক। প্রশাসন কে অবশ্যই জনস্বার্থে বিষয়টি দেখা দরকার।
তাড়াশ থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) মো: জিয়াউর রহমান বলেন, মুঠোফোনে অভিযোগ পেয়েছি। এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্ত এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত পুলিশ কোনো প্রকার ভূমিকা নেয়নি।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত জাহান বলেন, বিষয়টি এখনি দেখছি।