সোমবার , ৭ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৩শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - বর্ষাকাল || ১১ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

আকস্মিক বন্যায় চলনবিল প্লাবিত: ঈদের আনন্দ ম্লান কৃষকের

প্রকাশিত হয়েছে- সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫

লুৎফর রহমান, নিজস্ব প্রতিবেদক >>

চলনবিল অঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় সরিষা পরবর্তী নাবিজাত ব্রিধান-২৯ জাতের বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে ঈদুল আজহার ঠিক আগে এ এলাকার হাজারো কৃষক পড়েছেন চরম বিপাকে। অনেকেই ধান ঘরে তুলতে না পারায় কোরবানির ঈদের আনন্দ হারিয়ে ফেলেছেন।

তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, সিংড়া ও গুরুদাসপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়ে যায় মৌসুমী শ্রমিকেরা নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যাওয়ার পরপরই। শ্রমিক না পেয়ে কৃষকরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটার চেষ্টা করলেও ক্রমাগত পানি বৃদ্ধির কারণে সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। অবশেষে বাধ্য হয়ে অনেক কৃষক নৌকা নিয়ে কোমর-পানি পেরিয়ে নিজ হাতে ধান কাটতে নেমেছেন।

তাড়াশ উপজেলার মাগুড়া মুকন্দ গ্রামে দেখা যায়, গলা পানিতে দাঁড়িয়ে কৃষকরা ধান কাটছেন। বৃষ্টির পানি ও নদীর জলমগ্ন অবস্থায় একদিকে যেমন ধান রক্ষা করা কঠিন, অন্যদিকে বাড়তি শ্রম ও খরচ তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে।

সিংড়ার বিয়াস গ্রামের রোজিনা আক্তার মিতু জানান, অনেক কৃষক হতাশ হয়ে ধান কাটাই ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার অর্ধেক ভাগ দিয়ে অন্যদের মাধ্যমে ধান তুলছেন।

শাহজাদপুরের পোতাজিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বাচ্চু বলেন, রাউতারা বাঁধ কিছুটা রক্ষা করলেও বৃষ্টির কারণে পানি বেড়েই চলছে। এতে ফসল ডুবে যাচ্ছে।

হারভেস্টার মেশিন দিয়েও ধান কাটা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মাঠপর্যায়ের কৃষকরা। নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, ও শাহজাদপুর এলাকার কৃষকরা জানান, বিঘা প্রতি ৬ হাজার টাকা খরচ করেও মেশিন ডুবে যাওয়ায় ধান তোলা সম্ভব হচ্ছে না।

নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এমরান হোসেন বলেন, “ঈদের আগে ২৪ ঘণ্টায় আত্রাই নদীতে পানি ৩ সেন্টিমিটার বেড়েছিল। ঈদের পরের ২৪ ঘণ্টায় তা আবার ৩ সেন্টিমিটার কমলেও চলনবিলের নিম্নাঞ্চলে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পানির পরিমাণ বাড়ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, উজানের ঢল ও স্থানীয়ভাবে ভারি বর্ষণের কারণে এ বন্যা দেখা দিয়েছে। চলনবিল অঞ্চলের ১৬টি নদনদীর মধ্যে আত্রাই ও ভদ্রাবতী নদী দিয়ে উজানের পানি যমুনায় মিশলেও নিম্নাঞ্চলে পানি আটকে থাকছে। ভদ্রাবতী নদীর উপর নির্মিত জলকপাট উপচে পানি প্রবাহিত হওয়ার ফলে তাড়াশ-সিংড়া সংযোগস্থলের রানী ভবানী ব্রিজের উজান এলাকাও প্লাবিত হয়েছে।

চলনবিল অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। তবে যেসব জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছিল, সেখানে ব্রিধান-২৯ জাতের নাবিজাত ধান বেশি থাকায় ক্ষতি তুলনামূলক বেশি হয়েছে।

এদিকে, তাড়াশ কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ৫ দিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আরও বাড়বে এবং তাপমাত্রা হ্রাস পাবে। ফলে কৃষকদের দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।