শুক্রবার , ২৩শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ২৪শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

কয়রায় চিংড়ি ঘেরে ভাইরাসের হানা, পথে বসছেন চাষিরা

প্রকাশিত হয়েছে- শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫

মো. আক্তার হোসেন, কয়রা (খুলনা)

খুলনার কয়রা উপজেলায় চিংড়ি ঘেরে ভাইরাসের আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। উৎপাদন হ্রাস, পোনার মূল্যবৃদ্ধি, অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে উপকূলীয় এ অঞ্চলের চিংড়ি চাষ এখন মারাত্মক সংকটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে প্রায় প্রতিটি ঘেরে বাগদা চিংড়িতে মড়ক দেখা দিয়েছে। প্রচণ্ড খরায় ঘেরে জন্ম নেওয়া কাটা শ্যাওলা, যা সাধারণত বাগদা চিংড়ির প্রধান খাদ্য, সেটিও কার্যকারিতা হারিয়েছে। ফলে খাদ্য সংকট, অধিক তাপমাত্রা ও প্রাকৃতিক খাদ্যের ঘাটতির সম্মিলিত প্রভাবে চাষিরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

চাষিদের আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে—প্রাকৃতিক উৎস থেকে বাগদা রেণু পোনা আহরণে সরকারের নিষেধাজ্ঞা। ফলে চাষিরা হ্যাচারির পোনার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন, যা পরিবেশের সাথে সহজে খাপ খাওয়াতে না পারায় মৃত্যু হার বেড়েছে। চাষিরা জানান, হ্যাচারির পোনাগুলো তুলনামূলক দুর্বল এবং ভাইরাস সংক্রমণে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

কয়রা সদর, মহারাজপুর, মহেশ্বরীপুর, বাগালী, উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশীসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, অনাবৃষ্টি আর প্রচণ্ড রোদে ঘেরের পানি অনেক কমে গেছে। ঘেরের পানির স্তর স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক নিচে নেমে গেছে, কোথাও কোথাও মাত্র এক ফুট পানিতে চলছে চাষ। এতে সূর্যের তাপে পানি গরম হয়ে যাওয়ায় ও লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় চিংড়ির মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে গেছে।

চাষি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, তিনি ৯ বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করছেন। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঘেরের সব মাছ মরে গেছে। আরেক চাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, প্রাকৃতিক রেণু পোনা তাদের জন্য আশীর্বাদ হলেও সেটির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় এখন তারা বিকল্পহীন। হ্যাচারির পোনায় উৎপাদন কম এবং মড়ক লাগে বেশি।

কয়রা কপোতাক্ষ কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আ ব ম আব্দুল মালেক বলেন, চিংড়ি চাষে ভাইরাসের হানা চাষিদের আর্থিকভাবে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সরকার ও মৎস্য বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ না থাকলে চিংড়িশিল্পে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে।

এ বিষয়ে কয়রা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সমীর কুমার সরকার বলেন, অধিক তাপমাত্রা ও অপ্রতুল পানির স্তর মাছের মৃত্যুর অন্যতম কারণ। চাষিরা মৎস্য দপ্তরের পরামর্শ না মানায় সমস্যা আরও বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবে একটি ঘেরে ৩ ফুটের বেশি পানি থাকার কথা, কিন্তু এখন ঘেরগুলোতে এক ফুটেরও কম পানি রয়েছে। এতে তাপমাত্রা সরাসরি মাটিতে পৌঁছে গিয়ে পরিবেশ আরও প্রতিকূল হয়ে উঠছে।

তিনি আরও বলেন, ভাইরাস সংক্রমণে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না, কারণ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর। ভাইরাস রোধে সঠিক পরিবেশ এবং সজাগতা দরকার। চাষিরা চাইলে ঘেরের পানি ও মাটি পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে মৎস্য অফিস প্রস্তুত আছে।

চাষিরা এখন সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কার্যকর সহযোগিতা কামনা করছেন, যাতে তারা এই সংকট কাটিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেন।