শুক্রবার , ২৩শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ২৪শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

পাবনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব: প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা

প্রকাশিত হয়েছে- বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

কালের বেলা ডেস্ক >>

পাবনার সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের দিঘী গোয়াইলবাড়ি এলাকায় পদ্মা নদীতে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই প্রতিদিন একাধিক ভেকু মেশিন ও শতাধিক ট্রাকের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে স্থানীয় কৃষকদের শত শত বিঘা ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে।

আইন ও বাস্তবতা

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ অনুযায়ী, জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া বালু বা মাটি উত্তোলন দণ্ডনীয় অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয়ই। কিন্তু এসব আইন অমান্য করেই দিনের পর দিন অবৈধ বালু উত্তোলন চলছে, অথচ প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই।

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চলছে বালু উত্তোলন

স্থানীয়দের অভিযোগ, একসময় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানদের নেতৃত্বে এই বালু উত্তোলন চলছিল। কয়েক মাস আগে সেখানে গর্তে পড়ে তিনটি শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হলেও কার্যক্রম থামানো যায়নি। পরে তারা সরে গেলে বর্তমানে বিএনপি নেতাদের নেতৃত্বে নতুন করে বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চরতারাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান শেখ রহমত আলী এবং বিএনপি কর্মী এহসানুল হক বাবনের নেতৃত্বে পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে বালু উত্তোলন চলছে। তবে তারা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে এহসানুল হক বাবন বলেন, “এই বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। বালুর সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আপনারা প্রশাসনকে বলেন, তারা বন্ধ করে দিক।”

শেখ রহমত আলী বলেন, “আমি চরতারাপুরে রাজনীতি করি, চেয়ারম্যান ছিলাম, বিএনপির সভাপতি ছিলাম। এজন্য কেউ হয়তো আমার নাম বলছে, কিন্তু আমি বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত নই। প্রশাসন আমার কোনো কথা শোনে না।”

কৃষিজমির মারাত্মক ক্ষতি ও স্থানীয়দের উদ্বেগ

নদীর তীর ঘেঁষে বালু উত্তোলনের ফলে আশপাশের কৃষিজমি ধসে পড়ছে, যা স্থানীয় কৃষকদের জন্য বড় সংকট তৈরি করেছে। জমির মালিকরা নিষেধ করলেও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের মত উপেক্ষা করেই বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখা হয়েছে।

প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন

প্রকাশ্যে এমন অবৈধ কর্মকাণ্ড চললেও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা রহস্যজনক। ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি চক্র ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করছে, যা আইনের শাসনের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। দ্রুত প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ না এলে পাবনার প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও কৃষি ব্যবস্থা ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হবে।

প্রশাসনের রহস্যজনক নিরবতা

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, “আমি বিষয়টি জানি না। এটা এসিল্যান্ডের বিষয়। আমরা খবর পেলে এসিল্যান্ড মহোদয়কে জানাই। আপনারা একটু এসিল্যান্ডকে বলেন। তিনি আমাদের বললে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করব।”

পাবনা সদর ভূমি সহকারী কমিশনার মুরাদ হোসেন বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে খোঁজখবর নিচ্ছি।”তবে

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এক কর্মকর্তা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।