কালের বেলা ডেস্ক >>
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা থানা পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার কারণে চরম অবনতি হয়েছে আইনশৃঙ্খলার। হাটিকুমরুল গোল চত্বর টু বনপাড়া মহাসড়কে অত্যাধিক হারে বেড়েছে সংঘবদ্ধ দলের ডাকাতি ও ছিনতাই। পল্লী গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে মানুষের বাড়িতে চুরি, এছাড়া
পুলিশের রহস্যজনক নিরব ভূমিকায় বাড়ছে হামলা মারামারির মতো ঘটনা। আর এতসব অপরাধ দমনে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কেমন ভূমিকা পালন করছে থানার ওসি, প্রশ্ন সলঙ্গা থানার সুশীল সমাজের?
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পুকুরপাড় গ্রামের আবু তাহেরের সাথে কথা হল তিনি জানান গত ২৯ শে জানুয়ারি বুধবার দিবাগত রাত্রিতে একদল ডাকাত আমার বাড়ি অ্যাটাক করে আমার ছেলের মোটরসাইকেল স্বর্ণালংকার ও দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে চলে যায়।
অপরদিকে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বলাই সিমলা গ্রামের মো,ইয়াকুব আলীর বাড়ি থেকে গত পরশ এটকা মটর চুরি করে নিয়ে যায়।
একাধিক নির্ভরযোগ্য গোপন সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সলঙ্গা থানার বিভিন্ন স্থানে চুরি- ডাকাতি লুটপাট ঘটনা ঘটলেও তাৎক্ষণিকভাবে থানা পুলিশের কাছে তেমন সহযোগিতা পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ভেংরি হ্যাচারিতে
ঢাকা থেকে কাজ করতে আসা রিপন,ঝালকাঠি থেকে কাজ করতে আসা সিপন,পটুয়াখালী থেকে কাজ করতে আসা মনির হোসেন,ও ভেংরি হ্যাচারীর দুইজন সিকিউরিটি গার্ড শামীম হোসেন ও তয়জাল আলীর সাথে কথা বলে জানা যায় গত ২১ জানুয়ারি রোজ মঙ্গলবার রাত্রি ১২:৩০ মিনিটে ভেংরি হ্যাচারীতে আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ জন ডাকাতের দলের উপস্থিতি টের পেয়ে সলঙ্গা থানার ৯৯৯ ফোন দিলে থানা পুলিশ বলে আগে জিডি করেন তারপরে যাব। এত রাত্রিতে যাওয়া সম্ভব নয়। তাৎক্ষণিক থানা থেকে কোন পুলিশ পাঠানো হয়নি হ্যাচারিতে, থানা পুলিশের কোন হেল্প না পাওয়ায় ডাকাত দলেরা
আমাদের হাত পা বেঁধে হ্যাচারির ভিতরে থাকা বিদ্যুতের খুঁটিতে ঝোলানো তিনটি ট্রান্সফরমা ও জেনারেটারের মূল্যবান যন্ত্রাংশ এবং টাকা পয়সা মোবাইল লুট করে নিয়ে যায়।
যে কারণে চুরি ডাকাতি লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে অনেক। এদিকে পুলিশের নিরব ভূমিকা পালন করছে। এবং রাত্রিতে পুলিশের দায়সারা টহলে চোর- ডাকাতদের উপদ্রব বেড়েছে ব্যাপক
হারে।
এই ঘটনায় ভুক্তভোগীরা সালঙ্গা থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন।
অপরদিকে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক মো, জাহিদুল ইসলাম তালুকদার বলেন গত কয়েক দিনে ডাকাতের উত্তাপ বেড়েই চলেছে হরিণচড়া মোনকুমরিয়া ও ভেংরি চরা থেকে বেশ কয়েকটি শ্যালো মেশিন ও মটর চুরি হয়ে যায়।
এদিকে ১৩ জানুয়ারি রাত্রি দুইটার সময় সলঙ্গা ইউনিয়নের বনবাড়িয়া গ্রাম থেকে গভীর নলকূপের তিনটি ট্রান্সফরমা চুরি হয়ে যায়।
গভীর নলকূপের ম্যানেজার ফিরোজ বলেন, ট্রান্সফরমার তিনটি বিদ্যুতের খুঁটিতে ঝোলানো ছিল। রাত আনুমানিক ২ টার দিকে চুরি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ গভীর নলকূপের আওতায় প্রায় ১৮৬ বিঘা জমিতে ধান চাষ করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী কৃষকেরা জানান এই চুরির সাথে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিছু লাইন ম্যান, ও ঠিকাদার ও কর্মচারী ও জড়িত আছে।অপরদিকে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের জালশুকা গ্রামের রজব সরকার বলেন রাস্তার পাশে তিনটা বোডিং এর শ্যালো মেশিন সহ তিনটি টিউবওয়েল চুরি করে নিয়ে জায়।বেশ কিছুদিন আগে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কুমারগাইলজানি গ্রামে গভীর নল কূপের তিনটি ট্রান্সফরমা চুরি হয়ে যায়। গভীর নলকূপের ম্যানেজার মো,শফিকুল ইসলাম বলেন গভীর রাত্রিতে ট্রান্সফরমা চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।
সকালবেলা গিয়ে দেখি বৈদ্যুতিক পোলের সাথে ট্রান্সফরমার নেই বিষয়টি খুব দুঃখজনক গভির নলকূপের আওতায় ১৫০ বিঘা জমি চাষ করি আমরা। একবারেই নিঃস্ব হয়ে গেলাম থানায় থানায় করেছি এখনো ট্রান্সফর্মার কোনো সন্ধান মেলেনি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভেংরি এলাকার এক মুদি দোকানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন সলঙ্গা থানার টহল পুলিশ খুব কম কম আসে আর যদিও আসে ভেংরি লামিয়া তেল পাম্পের মসজিদের মধ্যে ঘুমায় সকালবেলা চলে যায় এরকম ডিউটিতে অবহেলা করলে চুরি ডাকাতি তো হবেই।
অপরদিকে উপজেলার বড়হর ইউনিয়নের পাগলা গ্রামের কৃষক আঃ রউফের মালিকানাধীন অগভীর নলকূপের দুটি ট্রান্সফরমারের ভিতরের মালামাল চুরি করে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তিনি এ বিষয়ে উল্লাপাড়া মডেল থানায় একটি অভিযোগ
দায়ের করেছেন।
তাড়াশ উপজেলার মালিপাড়া গ্রামের সিএনজি চালক রানা এ প্রতিবেদক কে জানান, বেশ কিছু দিন আগে সলঙ্গা থানাধীন হরিণ চড়ার পশ্চিমে চেয়ারম্যান বাড়ির রাস্তার অপজিটে কলাবাগানের সামনে বনপাড়া মহাসড়কে একটি সাদা মাহিন্দ্রা পিকআপ গাড়ি আমার সিএনজির সামনে পথ রোধ করে আমার গাড়িতে থাকা প্যাসেঞ্জারের কাছে থেকে দেশীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে ৮০ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে পালিয়ে যায়।
এভাবে যদি সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত বিভিন্ন পরিবহনে একাধিক একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটতে থাকে তাহলে সাধারণ জনগণ সন্ধ্যার পরে নিশ্চিন্তে বাইরে যেতে পারবে না।
এভাবে যদি সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত বিভিন্ন পরিবহনে একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটতে থাকে, তাহলে সাধারণ জনগণ চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়বে। যাত্রীরা রাতে ভ্রমণ করতে ভয় পাবেন, যা দৈনন্দিন জীবনে বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে। ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন, কারণ পরিবহনে ডাকাতির কারণে পণ্য পরিবহন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
এছাড়া, সাধারণ জনগণের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি বিশ্বাস কমে যেতে পারে, যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। এটি দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে এবং জনসাধারণের মধ্যে ভীতির পরিবেশ তৈরি করতে পারে। তাই প্রশাসনের উচিত দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এ বিষয়ে সলঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মনির হোসেন বলেন পাবলিক ওভারে থানায় আসতে চায় তার পরেও দুই এক জনের অভিযোগ পাচ্ছি এবং আমরা প্রতিনিয়ত নজর রাখছি।
সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জিএম আবু সালেব জানান, শীতের রাতে পাহারা না থাকায় ট্রান্সফরমারগুলি সহজেই চুরি করে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।