কালের বেলা ডেস্ক >>
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় অবৈধভাবে পুকুর খননকে কেন্দ্র করে কৃষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর জেরে এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে পুকুর খননের কাজে ব্যবহৃত একটি ভেক্যু (খননযন্ত্র) মেশিনে আগুন দিয়েছে।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে তাড়াশের বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্র পুকুর খননের ফলে কৃষিজমি সংকুচিত হয়ে আসছে। এতে পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে, ফলে জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং চাষযোগ্য জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষকরা প্রশাসনের কাছে বারবার অভিযোগ করলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তাদের।
ভেক্যুতে আগুন, কৃষকদের বিক্ষোভ
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তাড়াশ উপজেলার মাধবপুর, চক গোপিনাথপুর ও মথুরাপুর গ্রামের শত শত কৃষক একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তারা পুকুর খননের কাজে ব্যবহৃত ভেক্যু মেশিনে ডিজেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, পুকুর খননের কারণে পানি নিষ্কাশনের ক্যানেল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে আশপাশের ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে এবং আবাদযোগ্য জমি চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
মাধবপুর গ্রামের কৃষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “ভায়াট গ্রামের আব্দুল মতিন বিশাল এলাকা নিয়ে পুকুর খননের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন এবং প্রায় দেড়শ বিঘা জমি খননের উদ্যোগ নিয়েছেন। এতে আমাদের কৃষিজমি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।”
কৃষক জুরান আলী ও ছাবেন আলী বলেন, “যত্রতত্র পুকুর খননের ফলে ধান ও অন্যান্য ফসল চাষ করা যাচ্ছে না। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে।”
পুকুর খননে কারা জড়িত?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষকের দাবি, পুকুর খননের সঙ্গে মাধবপুর গ্রামের আব্দুল খালেক, আব্দুল মালেক, আদিল হোসেন, মাসুদ রানা এবং দক্ষিণ মথুরাপুর গ্রামের খোকা, আলাল ও মিলন জড়িত। তারা ব্যবসায়িক স্বার্থে কৃষিজমি নষ্ট করে পুকুর খনন করছেন।
কৃষকদের দাবি ও আশঙ্কা
স্থানীয় কৃষকরা দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন এবং অবৈধ পুকুর খনন বন্ধের জোর দাবি জানিয়েছেন। তারা আশঙ্কা করছেন, প্রশাসন যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে কৃষিজমির ক্ষতি আরও বাড়বে এবং কৃষকদের জীবিকা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রশাসনের অবস্থান
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, “গত এক দশকে তাড়াশ উপজেলায় প্রায় ১৪,৯৪০ বিঘা কৃষিজমি কমে গেছে, যার অন্যতম কারণ এই অবৈধ পুকুর খনন। এর ফলে ধান উৎপাদনও কমে গেছে।”
তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম হোসেন বলেন, “ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩ লঙ্ঘন করে পুকুর খননের ঘটনায় থানায় ছয়টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুইচিং মং মারমা বলেন, “অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করতে গ্রামে গ্রামে মাইকিং করা হচ্ছে।”