কালের বেলা ডেস্ক >>
পুলিশ হেফাজতে রেখে রোকন মোল্লা (৩৬) নামে এক ট্রাক চালককে নির্যাতনের অভিযোগে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার সাবেক ওসি আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম , ও সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হক সহ ৪ পুলিশ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ্য সহ আরো অজ্ঞাত ৯ থেকে ১০ পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলায় অন্যান্য অভিযুক্তরা হলেন সলঙ্গা থানার সাবেক তদন্ত ওসি শেখ তাজউদ্দিন আহমেদ,
উল্লাপাড়া থানার সাবেক সাব-ইন্সপেক্টর আব্দুস ছালাম, সলঙ্গা থানার সাব-ইন্সপেক্টর মুনসুর রহমান, সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর (সলঙ্গা) আব্দুল কুদ্দুস।
মঙ্গলবার (২৭ জানুয়ারি) সিরাজগঞ্জ আমলী আদালতে ট্রাক চালক রোকন মোল্লা নিজেই বাদি হয়েছে আদালতে মামলা দায়ের করেন। রোকন পাবনা জেলার ফরিদপুর থানার নেছরাপাড়া এলাকার রহমত মোল্লার ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বিগত ৫ মে ২০২৪ এ ট্রাক চালক রোকন মোল্লা বগুড়া থেকে পাবনা যাওয়ার পথে রাত ১ টায় ঢাকা-নগরবাড়ি মহাসড়কের কাওয়াক মোড়ে রাত্রিকালীন ডিউটিরত পুলিশের পিক-আপের সাথে ধাক্কা লাগে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উল্লাপাড়া মডেল থানার সাবেক ওসি আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম ড্রাইভার রোকন মোল্লার দিকে রিভলভার তাক করে। ট্রাক চালক ভয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে সিরাজগঞ্জ রোডের দিকে দ্রুত ছুটতে থাকলে পুলিশের গাড়িও পিছু নেয়। খবর পেয়ে সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হক ওই ট্রাকটি ধরতে পিছু নেয়। পরে সলঙ্গা থানার রাজশাহী-পাবনা মহাসড়কের হরিণচড়ায় ট্রাক চালক রোকন মোল্লা কে আটক করে মারধর করে এবং বিবস্ত্র অবস্থায় তাকে রাস্তার পাশে পুকুরে নামিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে পুকুর থেকে তুলে অভিযুক্ত আসামী সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হক উল্লাপাড়া মডেল থানার সাবেক ওসি
আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম ট্রাক ড্রাইভার রোকন মোল্লাকে গুলি করে মেরে ফেলতে বলে। পরে আসিফ তার ডান পায়ে গুলি করে সলঙ্গা থানায় নিয়ে ৩ টি মামলা করে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরবর্তী অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা অর্থপেডিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এতে ট্রাক চালক রোকন মোল্লার ডান পা কেটে ফেলা হয়।
এছাড়া গত বছরে সলঙ্গা থানায় সাবেক ওসি এনামুল হক সলঙ্গা থানার বিভিন্ন মহল থেকে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা চাঁদা তুলতেন সলঙ্গা থানার প্রতিটি ইটভাটা থেকে শুরু করে তেলপাম্প, ভাতের হোটেল, ভাঙ্গারির দোকান , চোরাই জ্বালানি তেলের দোকান, গ্রেফতার বাণিজ্য, বিভিন্ন মামলার বাদী ও বিবাদীর কাছে থেকে ব্যাপক অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
পুরোনো লোহা বিক্রেতা, পরিবহনচালক—কেউই বাদ যাননি ঘুষখোর ওসি এনামুল হকের হাত থেকে।
এসব অবৈধ কার্যক্রমের বিষয়ে গত বছর দৈনিক সংবাদে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। বিশেষ করে সলঙ্গা থানার যে সমস্ত অবৈধভাবে পুকুর খনন হতো প্রত্যেকটা ভূমিদস্যুর কাছ থেকে পার বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে অবৈধভাবে পুকুর খননের অনুমতি দিতেন,যদি কোন ভূমিধস্যু ওসি এনামুল হককে টাকা না দিয়ে পুকুর খনন করতেন তাৎক্ষণিক পুলিশ দিয়ে ভেকু মেশিনের চাবি নিয়ে এসে মামলা দিতেন। এমন বেপরোয়া ভাবে পুকুর খননকারীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি দৈনিক সংবাদ এর অনুসন্ধানে সত্যতা পাওয়ায় অভিযুক্ত ওসি এনামুল হকের বিরুদ্ধে ০৭-০৬-২০২৪, রোজ শুক্রবার দৈনিক সংবাদে “সলঙ্গায় ওসির প্রকাশ্যে চলছে কৃষি জমিতে পুকুর খনন” শিরোনামে নিউজ প্রকাশিত হয় এবং সলঙ্গা থানার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পাঠানপাড়ায় অবৈধভাবে কুকুর খননে বাধা প্রয়োগকারী ভুক্তভোগী আব্দুল মোন্নাফ ওসি এনামুল হককে অবৈধভাবে পুকুর খননের বিষয়টি মোবাইল ফোনে অবগত করলে ওসি এনামুল হক কর্তৃক ভুক্তভোগী মোন্নাফকে চাঁদাবাজি মামলার হুমকি দেয়ার কল রেকর্ডিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়।
উক্ত মামলার বাদি রোকন মোল্লা বলেন, উল্লাপাড়া থানার সাবেক ওসি আসিফ মোহাম্মাদ সিদ্দিকুল ইসলাম পিস্তল দিয়ে তাকে গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েছে। তার একটি পা নেই। তিনি দাবি করেন দীর্ঘদিন মিথ্যা মামলায় কারাগারে থাকার কারণে তার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে মামলা করতে দেরি হয়েছে। দীর্ঘদিন পর কারাভোগ শেষ করে জামিনে বেরিয়ে এসে তিনি মামলা করেছেন। ট্রাক চালক রোকন মোল্লা তার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবি করেন।
অপরদিকে সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হক পাবনা জেলার সিআইডি শাখায় কর্মরতকে উক্ত বিষয়ে মোবাইল ফোনে অবগত করলে তিনি এ প্রতিবেদকে বলেন পরে কল দিয়েন বলেই ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান আসামী উল্লাপাড়া মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসিফ মুহাম্মাদ সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন,মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করা হচ্ছে। বরং ট্রাক ড্রাইভার রোকন মোল্লার অস্ত্র মামলা সহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে।
এ বিষয়ে মামলা দাখিলকারী আইনজীবী গোলাম হাদী কিরন ইসলাম জানান, বাদী পক্ষের মেডিকেল রিপোর্ট এসেছে। সলংঙ্গা থানা আমলি আদালত সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপারকে মামলাটি রুজু করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।